আজকে লাওসের ভিসা করলাম কুয়ালালামপুর থেকে। ভিসা অফিসার প্রথমে জিজ্ঞেস করল কোন দেশ। তারপর কাউন্টারে রাখা লিস্ট দেখিয়ে বলল এইসব ডকুমেন্ট সব প্রিন্ট থাকা লাগবে। লেটার অফ পারমিশন ফ্রম কোম্পানির কথা জিজ্ঞেস করলাম। বললাম এটা নাই, কিন্তু আমার বিজনেসের ট্রেড লাইসেন্স আছে। বলল হবে, এবং ফরম দিল।
ফরমটা ফিল-আপ করে সব কাগজ সহ পাসপোর্ট দিলাম। সব খুটিয়ে খুটিয়ে মিলিয়ে দেখল। তারপর বললঃ
– টিকেটটা বুকিং কপিতে হবে না, কনফার্ম টিকেট লাগবে।
– কনফার্ম টিকেট দিতে পারব না। কারন ভিসা না হলে অনেক টাকা লস হবে।
– কনফার্ম টিকেট হলে আমরা ভিসা দিব।
– না, তারপরেও দিতে চাই না। এটা কোন এ্যামবাসির সিস্টেম না। আমি যাওয়ার সময় অবশ্যই রিটার্ন টিকেট করে যাব। যদি রিটার্ন টিকেট না থাকে, তোমার ইমিগ্রেশন আমাকে ডিপোর্ট করে দিবে, সমস্যা নাই।
– তোমার সাথে আর কে আছে?
– কেউ নাই, একাই যাচ্ছি।
– তোমার টিকেট বুকিং কে করেছে? কোন এ্যাজেন্সি না তুমি নিজে?
– নিজেই করেছি।
– তোমার হোটেল বুকিংওতো মাত্র ১ দিনের?
– আরো করা আছে।
ফাইলে খুঁজে দেখি আসলে আর কোনটা করি নাই। বললাম, বাকিগুলা আমার হোটেলে রয়ে গেছে।
এবার আরো যোগ করলাম, দেখ, আমি রিয়েল ট্যুরিস্ট। অনেক দেশে গেছি, তার মধ্যে ইউরোপ এবং ইউকে আছে। তোমার দেশে গিয়ে আমি থেকে যাব না। আমি শুধু তোমাদের ইউনেস্কো শহর লুয়াং প্রবাং আর কুয়াংসি ফলস দেখতে চাই (এতক্ষণ ভুলে সিয়েম রিপ বলছিলাম আর ফাইলে এ্যাংকর ওয়াটের ম্যাপটা খুঁজতেছিলাম)।
এবার সে ভাল করে দুইটা পাসপোর্টের সবগুলো ভিসা দেখল। তারপর নিমরাজি হল জমা নিতে। বলল দুপুরের পরে আস, ৪ টার মধ্যে। জিজ্ঞেস করলাম, সবচেয়ে আগে কয়টার মধ্যে আসা যাবে? বলল, ৩ টা। ৪০০ রিঙ্গিট দাও। সেটা নিয়ে রিসিট দিয়ে দিল ৩ টায় কালেকশন টাইম লিখে। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসলাম।
আমার আগে একজন বাংলাদশি সেখানে ছিল। কোন কম্যুনিকেশন করতে না পেরে সোফায় বসে ছিল। আমার কাছে কি কি লাগবে শুনে টিকেট বুকিং করতে গেল। ২ টার পরে এসে জমা দিবে। ভিসা কালকে পাবে। আর কেউ ছিল না সেখানে।
কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে বসে ঘন্টা তিনেক সময় কাটিয়ে দিলাম ঠান্ডা এক প্লেট নুডলস আর ২ কাপ রং চা খেতে খেতে – যেটা ছিল জীবনের দীর্ঘতম লাঞ্চ। এর মধ্যে নামল মুষলধারে বৃষ্টি। তারপরে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে এ্যাম্বাসিতে চলে এসে পৌনে ৩ টায় রিসিটটা দিলাম অফিসারের কাছে। সেটা রেখে বসতে বলল। কাউন্টারের পাশের চেয়ারটায় বসলাম। ১ মিনিট পরে হাত বাড়িয়ে পাসপোর্টটা দিয়ে দিল।
তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বের হতে গেলাম৷ দরজার সামনে সকালের ভদ্রলোক বললেন ওনার কাগজগুলো দেখে দিতে। কনফার্ম টিকেট সহ সব কাগজ নিয়ে এসেছেন। মিলিয়ে দেখে বললাম ঠিক আছে। লাওসে কোথায় যাবে জানে না। ফর্মে লেখার জন্য ভিয়েনতিয়েন আর লুয়াং প্রবাং লিখে দিয়ে চলে আসলাম। তখন আর দুইজন ভারতীয় সেখানে ছিল।
লাওসের ভিসার জন্য যেসব ডকুমেন্টস লাগবে (সব প্রিন্ট করা থাকতে হবে):
- পুরন করা ভিসা আবেদন ফরম
- পাসপোর্ট
- পাসপোর্ট কপি
- ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট
- হোটেল বুকিং
- কনফার্মড রিটার্ন টিকেট (বুকিং কপিতে হবে না স্ট্রং ট্রাভেল হিস্টোরি না থাকলে এবং ভাল ইংলিশে কনভিন্স করতে না পারলে)
- যেখানে কাজ করেন সেই কোম্পানির পারমিশন (NOC) / স্টুডেন্ট হলে ইউনিভার্সিটির পারমিশন / ব্যাবসা করলে ট্রেড লাইসেন্স।
- ছবি
- ৪০০ রিঙ্গিট ভিসা ফি